আজ ২২ শে নভেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ডানপন্থী সংগঠন এর পক্ষ থেকে পালন করা হচ্ছে আজ “লজ্জা দিবস”। তো কি এই লজ্জা দিবস? সংগঠন গুলির তরফ থেকে কি প্রচার করা হচ্ছে।
আজ থেকে ১৩ বছর আগে আজকের দিনেই ধর্মান্ধ আরবপন্থী মৌলবাদীদের তুষ্ট করতে কমিউনিস্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়িয়ে দেয় তসলিমা নাসরিনকে। কিন্তু কেনো এই সিদ্ধান্ত কি বলছে ইতিহাস।
তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখিকা তার একটি গ্রন্থ নাম ‘ লজ্জা ‘ , যাতে তিনি মুসলিম মৌলবাদ ও বাংলাদেশে হিন্দুদের করুণ অবস্থার কথা বর্ণনা করে ছিলেন। সেই গ্রন্থের জন্য তাকে সে দেশের মুসলিম মৌলবাদীদের শিকার হতে হয়। তার গ্রন্থ ‘ লজ্জা ‘ নিষিদ্ধ করা হয় বাংলাদেশে , তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। তিনি তখন প্রাণ বাঁচাতে ও আশ্রয় নিতে পালিয়ে আসেন কলকাতায়।
কিন্তু কলকাতাও তার জন্য নিরাপদ ছিল না । ১৭ অগস্ট, ২০০৭ কলকাতার মুসলমান ধর্মযাজকেরা বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনকে হত্যার ফতোয়া জারি করে।
২১ শে নভেম্বর কলকাতা শহরে “অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি ফোরাম”-এর ছত্রছায়ায় কয়েকজন প্রতিবাদকারী তসলিমা নাসরিনকে কলকাতায় থাকতে না দেওয়ার দাবিতে মধ্য কলকাতা অঞ্চলের একটি বড় অংশ অবরোধ করে এবং সহিংস দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সেই দিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার শহরে সেনা মোতায়েন করে দেয়।
এই দাঙ্গার সময় কলকাতার বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকরা দাঙ্গাকারীদের ছোঁড়া পাথরের ঘায়ে আহত হয়েছিলেন। দাঙ্গাকারীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এই দাঙ্গার ফলে মধ্য কলকাতার শিয়ালদহ, মল্লিকবাজার, সি.আই.টি রোড, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, পদ্মপুকুর, মৌলালি ও এন্টালি এলাকায় যানবাহন স্তব্ধ হয়ে যায়।
কলকাতার রাস্তাগুলি রণক্ষেত্রের আকার নিলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছয় কোম্পানি সেনা মোতায়েন করে। দুপুর তিনটে নাগাদ দুই কোম্পানি সেনা শহরে ফ্ল্যাগ মার্চ শুরু করে। প্রত্যেক কোম্পানিতে ১০০ থেকে ১২০ জন জওয়ান ছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই আরও চার কোম্পানি সেনা মোতায়েন করা হয়।
২২ শে নভেম্বর মুক্তচিন্তার শহরে বাঙ্গালীর মানবতা, উদারপন্থা কে তিরস্কার করে তসলিমাকে তাড়িয়ে দেয় কমিউনিস্ট সরকার।
ডানপন্থী বুদ্ধিজীবি মহলের দাবি, ইসলামিস্টদের খুশি করতে কমিউনিস্টরা যখন তসলিমাকে তাড়িয়ে দিল তখনও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেঁচে। বঙ্গসংস্কৃতির এই আনন্দ-ঘোষিত যুগপুরুষ ফিসফিস করে প্রতিবাদ করেছিলেন কিনা জানা নেই, তবে প্রকাশ্যে করেননি।
ডানপন্থী বুদ্ধিজীবি দের অনেকে কটাক্ষ করে বলছেন সংস্কৃতির শেষ কথা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নবরত্ন সভার প্রাণপুরুষ তথা পৃষ্ঠপোষক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কর্তব্য স্থির করতে বিলম্ব করেননি। সেই সময় শঙ্খ ঘোষ জ্বলজ্বল করছিলেন, নবনীতা দেবসেন ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, সুবোধ যথারীতি ভোজনরসিকতায় মেতে ছিলেন, শ্রীজাত আবৃত-কাব্য লিখছেন, শুভাপ্রসন্ন বায়সচিত্র আঁকছেন, তৃণ থেকে বটবৃক্ষ – সব মাপের কবি সাহিত্যিক নন্দন মুখরিত করছিলেন। জেএনইউতে মুক্তচিন্তার কমিউনিস্টরা বিপ্লব করছিলেন। যাদবপুর প্রেসিডেন্সি সর্বত্র বাকস্বাধীনতার সংগ্রাম চলছিল।
তবু তসলিমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ কী? তিনি ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি হিন্দুরও বিরোধিতা করেছিলেন, কিন্তু তার জন্য তার মৌখিক সমালোচনার বাইরে কোনো কিছু সহ্য করতে হয়নি। সহি-বাঙ্গালীর দেশ বাংলাদেশের কথা ছেড়ে দিন, ৩০% মুসলিমের রাজ্য (তখন আরও কম ছিল) পশ্চিমবঙ্গেও তার ভাগ্যে জুটেছিল মৃত্যুদন্ডের ফতোয়া। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সকল নেতা ছিল এককাট্টা। মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভাঙ্গচুর অগ্নিসংযোগ অবরোধ করল ‘বিশেষ গোষ্ঠী’। “সংস্কৃতির শহর” কলকাতা হয়ে উঠল ইরাক বা সিরিয়া বা আফগানিস্তানের জঙ্গী-শহর। রাস্তায় সেনাবাহিনীর রুটমার্চ, যুদ্ধের ট্যাঙ্কারের চলাচল… এই নাকি কলকাতা!!!
আজ সেই “লজ্জা দিবস” । ডানপন্থী সংগঠন গুলির এই প্রচারে সাড়া ও দিয়েছে নেটিজেনেরা । অসংখ্য শেয়ার হয়েছে তাদের পোস্ট। যে প্রতিবাদ ১৩ বছর আগে হওয়ার কথা ছিল, আজ সেই প্রতিবাদ অনেকাংশে সফল।