‘জেহাদিদের মা হাসিনা’ বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর ‘দারুল ইসলাম’ বানিয়ে ফেলেছেন বললেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন

Taslima Nasreen

সাকিব আল হাসানের বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে এইদিন হাসিনা সরকার ও বাংলাদেশে র বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন । তিনি এই দিন সংবাদ মাধ্যম কে জানান “জিহাদির হুমকি, সাকিবের ক্ষমা চাওয়া – এসবই প্রমাণ করলো দেশটাকে জিয়া, এরশাদ, খালেদা আর হাসিনা মিলে ভয়ংকর এক ‘দারুল ইসলাম’ বানিয়ে ফেলেছেন।

এই দেশ জিহাদি এবং জিহাদি- সমর্থক ছাড়া আর কারও বসবাসের যোগ্য নয়।” এই হাসিনা সরকার জিহাদিদের পরোক্ষভাবে যে পূর্ন সমর্থন করছে তা তিনি স্পষ্ট ভাষায় বললেন।
সংবাদ মাধ্যম কে তিনি আরো বললেন সাকিবের ক্ষমা চাওয়ার ভিডিওটি দেখে লজ্জা পেলাম। আমার বিরুদ্ধে নব্বই সাল থেকে টানা তিন বছর মৌলবাদী আন্দোলন চলেছিল, আমাকে হত্যা করার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছিল লাখো মৌলবাদী, নির্বিঘ্নে আমার মাথার মূল্য ঘোষণা করেছিল জিহাদি নেতারা — কই আমি তো একবারও ভাবিনি আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে! সরকার আমার বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল, আমাকে দু’মাস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তরীণ থাকতে হয়েছিল, কই একবারও তো মনে হয়নি ক্ষমা চেয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে আমাকে? আমার শুধু মনে হয়েছিল, আমি কোনও অন্যায় করিনি, আমার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। ক্ষমা যদি কারও চাইতেই হয়, ওদের চাইতে হবে আমার কাছে। ”
“একটা লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় থ্রেট করলো তো উনি একেবারে ‘আমি গর্বিত মুসলমান , আমি পূজা মণ্ডপ উদবোধন করিনি, অন্য একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, পথে এক মিনিটের জন্য মন্ডপে অনেকের অনুরোধে যেতে বাধ্য হয়েছি, নাকে খৎ দিচ্ছি আর যাবো না। সবার ওপরে ইসলাম ধর্ম তাহার ওপরে নাই। আমাকে ক্ষমা করে দিন। ‘— এসব বলার কোনও দরকার ছিল না। লোকে বলে নিজের ‘ কল্লা’ বাঁচাবার জন্য বলেছেন, তাঁর দোষ নেই। না, আমি মনে করি না, তাঁর কল্লা নিয়ে সত্যিই কোনও সমস্যা হতো। তিনি তো আর অভিজিৎ রায় নন, নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া রাস্তায় একা হাঁটেন। তিনি তো হজ্ব করে আসা সাচ্চা মুসলমান, তিনি তো অভিজিতের মতো ইসলামের সমালোচনা করেননি কোনওদিন। তবে কেন জঙ্গি জিহাদির কাছে তিনি মাথা নোয়ালেন? কেউ যদি এখন রাম দা নাচিয়ে বলে তুই আর কোনওদিন ক্রিকেট খেলবি তো তোকে কুপিয়ে মেরে ফেলবো, সাকিব কি খেলা ছেড়ে দেবেন? এতদিন খেলেছেন বলে অনুতপ্ত হবেন? ইসলামে তো গান বাজনা নাচা ছবি আঁকা সবই নিষিদ্ধ, খেলা নিষিদ্ধ হতে কতক্ষণ! ”

বাংলাদেশের পূজা মন্ডপে মুসলমানরা যায়। প্রধানমন্ত্রীও যান। পূজা দেখা তো কোনওদিন হারাম ছিল না। কবে থেকে এটি বাংলাদেশে হারাম? নাকি ওই রামদাওয়ালা জিহাদিটি মুসলমানদের পূজা মণ্ডপে যাওয়া পছন্দ করে না বলে কোনও মুসলমানের পূজা মণ্ডপে যাওয়া চলবে না? কী হতো যদি সাকিব বলতেন ‘পূজা উদবোধন করেছি,সম্মানিত বোধ করেছি। হিন্দুরা কী সহজে বিধর্মীদের পূজায় আমন্ত্রণ জানান, মুসলমানদের দিয়ে তাঁদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মানুষ্ঠান উদবোধন করান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এটি চমৎকার উদাহরণ, আমাদেরও শিখতে হবে ওঁদের কাছ থেকে, আমাদেরও ইসলামি পরবে অনুষ্ঠানে বিধর্মীদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। ঈদের অনুষ্ঠানাদি বিধর্মীদের দিয়ে উদবোধন করাতে হবে। উদারনৈতিক ইসলামকে গ্রহণ এবং হিংসের আর ঘৃণার ইসলামকে বর্জন করাটা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।‘

“যদি বলতেন তাহলে নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ করতেন সমাজের জন্য। কিন্তু তিনি এখন তাঁর কোটি ভক্তকে বলে দিলেন এক/দুই মিনিটের জন্য পূজা মণ্ডপে যাওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত, তিনি ভুল করেছেন ওই মন্ডপে গিয়ে। এর মানে মুসলমানের পূজা মন্ডপে যাওয়া ঠিক নয়। তিনি জিহাদিদের শক্তি লক্ষ গুণ বাড়িয়ে দিলেন। এখন কোনও মুসলমান পূজা মন্ডপে গেলে রক্ষে নেই, কোনও মুসলমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বললে রক্ষে নেই। কোনও মুসলমান হিন্দুর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলে রক্ষে নেই।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *